ডিজিটাল এক্স-রে

Department Introduction

এক্স-রে কী? 

এক্স-রে এক প্রকারের তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ। সাধারণভাবে এতটা বললে বরং একটু কঠিনই হয়ে যায়। এক্স-রে সবচেয়ে বেশি যে কারণে পরিচিত সেটা চিকিৎসা ব্যবস্থার কল্যাণে। 

মানব শরীরের ত্বক ভেদ করে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভাগের ছবি প্রকাশের মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণে এক্স-রে এখন পর্যন্ত প্রায় এককভাবে সারা পৃথিবীতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে এক্স-রের কাজের পরিধি আরও অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে। ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের কাজেও বর্তমানে সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এক্স-রে। 

এক্স-রে কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। কোমল এক্স-রে এবং কঠিন এক্স-রে। কোমল এক্স-রে অপেক্ষাকৃত কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো বিকিরণ করে। এর পরিমাণ হতে পারে সর্বোচ্চ ১০ ন্যানোমিটার। 

আলোর বিভিন্ন স্তরের মাঝে এর অবস্থান তাড়িতচৌম্বক এবং অতিবেগুনীর মাঝামাঝি। অন্যদিকে কঠিন এক্সরের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১০০ পিকোমিটার। এর অবস্থান তাড়িতচৌম্বক থেকে গামা রশ্মির মাঝামাঝি। এক্স-রে এবং গামারশ্মির মূল পার্থক্য এক্স-রের উৎপত্তি ইলেকট্রনের আন্দোলনে হলেও গামারশ্মির উৎপত্তি নিউক্লিয়ার রিএ্যাকশনের মাধ্যমে।

এক্স-রে'র উৎস এবং প্রভাব

স্ট্যামফোর্ড সিনক্রোট্রোন রেডিয়েশন লাইটহাউজ এর পরিচালক ক্যালি গেফনি এর মতে, পৃথিবীতেই বর্তমানে এক্স-রে তৈরি করা সম্ভব। 

কপার বা গ্যালিয়ামের মত পদার্থের পরমাণুতে তীব্র আলো দ্বারা আঘাত করা হলে পরমাণুর ‘S’ শেলের ইলেকট্রন সমূহ উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজস্ব অরবিট ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় পরমাণু অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। 

এরপর পরমাণু সেখানেই স্থির হতে চায় কিংবা পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে চায়। গেফনি বলেন এসময় 1p অরবিটাল থেকে একটি ইলেক্ট্রন ‘S’ অরবিটে প্রবেশ করতে চায়। যার ফলাফল হিসেবে আমরা এক্স-রে পেয়ে থাকি। 

তবে গেফনি বলেন, এর মাধ্যমে এক্স-রে পাওয়া বেশি কষ্টসাধ্য। এই আলোকরশ্মি একইসাথে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর নিজস্ব কোনো দিক নেই এবং এটিকে নির্দিষ্টকরণও কোনোভাবে সম্ভব নয়। লাইভ সায়েন্স নামক এক ম্যাগাজিনে গেফনি স্বীকার করেন, এই পদ্ধতিতে শক্তিশালী এক্স-রে পাওয়া অসম্ভব। 

তবে এই পদ্ধতি পোলারাইজড হওয়ার ফলে ফোটনের গতিপথ সবসময় একই দিকে হয়। যেহেতু ইলেকট্রনসমূহ প্রায় আলোর বেগের কাছাকাছি গতিবেগে ছুটতে থাকে এবং আলোর প্রবাহ হঠাৎ থামানো হলে সকল ইলেকট্রন কেবলমাত্র সামনের দিকেই ধাবিত হবে। এর ফলে এক্স-রের সঠিক বর্ণ পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হবে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। 

এক্স-রে ইমেজিং

এক্স-রের বিভিন্ন ধাতুর প্রতি ভেদ্য ক্ষমতার কারণে বিভিন্ন পরীক্ষার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। যে কোনো গাঁথুনিতে ফাটল কিংবা অসামঞ্জস্যতা নির্ণয়ে এক্স-রে ইমেজিং গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করা হয়। 

রেডিয়েশনের প্রভাবে সহজেই যে কোনো গঠনের সূক্ষ ফাটল কিংবা অসামঞ্জস্যতা ফিল্ম বা ডিটেক্টরে স্পষ্ট ছবি তৈরি করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক্স-রে এই পদ্ধতিতেই যুগের পর যুগ রোগ নির্ণয় করে আসছে।

এছাড়া এক্স-রে যাত্রাপথের নিরাপত্তার কাজেও ব্যাপক জনপ্রিয়। কার্গো, লাগেজ কিংবা স্বয়ং যাত্রীর শরীরে ইলেকট্রনিং ইমেজিং এর ম্যাধমে রিয়েল টাইম ভিজুয়াল তৈরি করে যার ফলে তৎক্ষণাৎ অবৈধ বস্তুর সন্ধান পাওয়া সম্ভব। 

তবে এক্স-রে ইমেজিংয়ের সবচেয়ে বড় ব্যবহার দেখা যায় চিকিৎসাক্ষেত্রে। শরীরের টিস্যুর মাঝ থেকে হাড়ের কিংবা অভ্যন্তরীণ গঠনের ইমেজিং এর মাধ্যমে এক্স-রে চিকিৎসকদের রোগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করে। 

এক্স-রে থেরাপি

সাধারণ রেডিয়েশন থেরাপি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের ডিএনএ ভাঙ্গনের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। তবে এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ কোষের ডিএনএ ধ্বংস হবার সম্ভাবনা থাকায় বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

আমেরিকান পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থার মতে, এক্স-রে যে কোনো নির্দিষ্ট একটি অংশের অণু পরমাণু থেকে সকল ইলেকট্রন সফলভাবে সরিয়ে নিতে সক্ষম।

পর্যাপ্ত ব্যবহারের মাধ্যমে এটি মানবশরীরের যে কোনো কোষকেও ধ্বংস করতে সক্ষম। যদিও এক্স-রের ব্যবহারে ক্যান্সার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে, একইসাথে ক্যান্সারের প্রতিরোধেও এক্স-রে দারুণ কার্যকরী। ক্যান্সার টিউমারে এক্স-রে নিক্ষেপণের মাধ্যমে ক্যান্সারের অস্বাভাবিক কোষ সহজে ধ্বংস করা সম্ভব।